সিনেমার হালচাল - চলচ্চিত্র চিত্রায়ণ

Thursday, April 27, 2017

On April 27, 2017 by Jakia   1 comment


সিনেমা - যোগাযোগের এমন এক মাধ্যম যা সরাসরি অডিয়েন্সকে কন্টেন্টের সাথে যোগ করতে পারে। বাস্তবিক জীবনে কারও দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-উল্লাস দেখে হয়ত আমরা যতটা না আবেগ আপ্লুত হই, তার চেয়ে বেশি আবেগ আপ্লুত হই সিনেমায় নায়ক-নায়িকার আবেগ দেখে। তার  মানে  সিনেমা সরাসরি দর্শকের মস্তিষ্কে উদ্দীপনা জাগায়। ‘অজ্ঞাতনামা’- সিনেমায় দরিদ্র পিতার পুত্রশোকে কাতরতা; মনপুরা সিনেমায় ভালোবাসার করুণ পরিণতি; কোরিয়ান সিনেমা - মিরাকেল ইন সেল নং.৭ এ বাবা-মেয়ের ভালোবাসা আর বিচ্ছেদ দেখে অনেকের চোখেই জল আসে। কেউ কেউ কাঁদেন অঝোরে। হিন্দী সিনেমা ‘লাগান -এ গ্রামের দলটির ক্রিকেট খেলায় জিতে যাওয়া আর ব্রিটিশদের পরাজিত করার দৃশ্য দর্শকদের বিনোদিত করেছে চরমভাবে। আনন্দে উল্লাসিত হয়েছে অডিয়েন্স। যদিও সবাই জানে সিনেমার ঐ দৃশ্যায়নগুলো বাস্তব নয়। তারকাদের বাস্তব জীবন মোটেও সিনেমার মত নয়। তবু সিনেমা আমাদের হাসায়-কাঁদায়। তাই চলচ্চিত্র এক ভাষা। যে ভাষা আমাদের আবেগ, আমাদের চিত্তকে বিনোদিত করার এক মাধ্যম, আমাদের সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি, প্রথা ভাঙার প্রতিজ্ঞা, প্রতিবাদের ভাষা, সংকটের চিত্রায়ণ, নান্দনিকতার উৎস।
On April 27, 2017 by Jakia   No comments
প্রফেসর তেসম এইচ. গেবরেইল
 চলচ্চিত্রকে বাখ্যা করতে গিয়ে (মূলত তৃতীয় বিশ্বের চলচ্চিত্র) তেসম এইচ. গেবরেইল একে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। যার অর্থ মোটামুটি এরকম-

১)      অন্ধ অনুকরন নির্ভর চলচ্চিত্র

২)      স্মৃতিকাতরতা (ঐতিহ্য মনেপড়া) নির্ভর চলচ্চিত্র

৩)      প্রতিবাদী চলচ্চিত্র

এই তিনটি ধাপ ব্যাখ্যা করতে গেলে আমরা দেখি তৃতীয় বিশ্বের যে শিল্প বিকাশ তা ঘটে এই তিনটি পর্যায়ে। যার প্রথমটিতে একজন পরিচালক শুধুমাত্র  ব্যবসায়িক  মুনাফা লাভকেই শিল্পের একমাত্র  উদ্দেশ্য বলে মনে করেন। যাকে বলা যায়- অর্থাৎ  শিল্প নির্মাণ করতে হবে বলে করা। এর গুনগতমান, শৈল্পিক গুনাবলী  তখন মূখ্য থাকে না।
On April 27, 2017 by Jakia   No comments
  
বর্তমানে চলচ্চিত্র ব্যবসা-সফল করার জন্য কিছু কিছু চলচ্চিত্র নির্মাতারা আইটেম গান পরিবেশন করে থাকেন।  এই আইটেম গানকে অনেকেই আইটেম নম্বর বলে থাকেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে সিনেমা ব্যবসা সফল হওয়ার বিপক্ষে নই। একটি সিনেমা যদি ব্যবসা সফল- ই না হয় তাহলে পরিচালকরা  সিনেমা তৈরির আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। কিন্তু যে বিষয়টি আমার কাছে বিতর্কিত তা হলো সিনেমা ব্যবসা সফল হওয়ার একমাত্র মাধ্যম হয়ে যাচ্ছে যৌনতা। এই সস্তা  উপাদানটি না থাকলে নাকি ‘‘দর্শক খাবে না’’ ,‘‘কাটতি  হবে না’’ এমন ধারণাও  পরিচালকদের মধ্যে রয়েছে।
আইটেম গান ছাড়াই সফল সিনেমা - ‘‘ মনপুরা’’

On April 27, 2017 by Jakia   No comments


  ১.  গেরিলা: নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এই চলচ্চিত্রের পোস্টারে শুধু একজন নারী চরিত্রকে দেখানো হয়েছে।



বিশ্লেষণ: প্রথাগত নারীর চরিত্রায়ন ভেঙে এই পোস্টারে নারীর উপস্থাপন হয়েছে দৃঢ়, আত্মপ্রত্যয়ী, নির্ভীক, প্রতিবাদী এক সত্ত্বা হিসেবে। অস্ত্র হাতে নারীর প্রতিচ্ছবি নারী চরিত্রকে দিয়েছে এক নতুন মাত্রা।

অভিব্যক্তি: চাহনি ও অঙ্গভঙ্গিতে সাহসী ও বলিষ্ঠ চেতনার বহিঃপ্রকাশ ।


On April 27, 2017 by Jakia   No comments

সাম্প্রতিক সময়ে একটি কথা প্রায় ক্লিশেতে পরিণত হয়েছে যে আমাদের দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির ব্যাপক অবনতি হয়েছে, চলচ্চিত্রকাররা অসুস্থ ধারার সিনেমা নির্মাণ করছেন !

এই যে অসুস্থ ধারা (!!!) চলছে তার পেছনের কারণ আসলে কী?

আমাদের চলচ্চিত্র জগৎের দুই কিংবদন্তীর নাম এখানে উল্লেখ করছি জহির রায়হান এবং তারেক মাসুদ । তাঁরা দুজনই বিকল্প ধারার সিনেমা নির্মাণ করেছেন । নির্মাণ করেছেন প্রতিবাদী রাজনৈতিক সিনেমা, সিনেমার কন্টেন্ট এর ম্যাধমে ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল এর মাধ্যমে , সংলাপ, দৃশ্যায়ন এর ম্যাধমে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন সিস্টেমকে । কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা এই দুই মেধাবী ব্যক্তিত্বকে অকালে হারিয়েছি। তাঁরা দুজন যদি অকালে মৃত্যু মুখে পতিত না হতেন তাহলে হয়ত আজ আমাদের সিনেমা জগৎ নিয়ে সমালোচনা অনেকাংশেই কমে আসত। আমরা যখন ভারতীয় সিনেমা নিয়ে মেতে আছি, আমাদের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ভারতে যাচ্ছেন সিনেমায় অভিনয় করতে ঠিক তখন ভারতীয় অভিনয়শিল্পী অমিতাভ বচ্চন , শুভশ্রী|

ভারতীয় অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন

ভারতীয় অভিনেত্রী শুভশ্রী



এর পিছনে রাজনীতি ,রাজনৈতিক অর্থনীতি যেমন দায়ী ,ভারত আমাদের উপর যেমন আগ্রাসন চালায় তেমনি আমাদেরও দুর্বলতা আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি তার গুনগত মান হারাচ্ছে।



তো প্রশ্ন হচ্ছে কেন তারেক মাসুদ. জহির রায়হান, সালাহউদ্দীন জাকি,মসিহউদ্দিন শাকের , আলমগীর কবীর , নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুৃৃ.. এদের মতো পরিচালক কেন হাতেগোনা ?

আমাদের দেশে তারেক মাসুদ এর ‘মাটির ময়না’, ‘রানওয়ে’ সেন্সরড হয় । ‘রানওয়ে’ সিনেমা পরিচালককে দর্শকের কাছে নিজ দায়িত্বে পৌঁছে দিতে হয়েছে। কাছাকাছি সময়ে ‘আয়নাবাজি’ ,‘অজ্ঞাতনামা’,সিনেমা মুক্তি পায় কিন্তু ‘আয়নাবাজি’ দেখার জন্য সিনেমা হলে উপচে পড়া ভীড় আর ‘অজ্ঞাতনামা’র কথাটি হয়ত অনেকে জানেই না।

আমাদের দেশের সিনেমায় চুম্বন দৃশ্য সেন্সরড হয় কিন্তু ধর্ষনের দৃশ্যায়ন হয় লম্বা সময় জুড়ে। ধর্ষনের শিকার নারী কি ধরনের বিকৃত চিৎকার করছে , ধর্ষণ করার জন্য ভিলেন নারীর পরিধেয় বসন এর কোন কোন অংশ খুলে ফেলছে, ছিঁড়ে ফেলছে তার দৃশ্যায়ন হয় বিস্তৃত । এই ব্যাপারটি কখনও সেন্সরড হয় না।

তাহলে পরিচালক কীভাবে আগ্রহী হবেন রাজনৈতিক সিনেমা তৈরিতে?

মাটির ময়না’ - র মতো রাজনৈতিক সিনেমা সেন্সরড হয়। কারণ এই সিনেমায় সরকারকে রাষ্ট্রব্যবস্থা কে সরাসরি সমালোচনা করা হয়েছে কিন্তু প্রোপাগান্ডা সিনেমা যেখানে একতরফাভাবে রাজনৈতিক চেতনা - যা যুক্তির আলোকে ব্যাখ্যা করা হয় না। বরং দর্শকের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় স্বার্থ-সিদ্ধি আদায়ের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক চিন্তাধারা।



তার মানে সিনেমা সেন্সরশীপ এর প্রক্রিয়ায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সরকার বিরোধী মনোভাব বন্ধ করে রাখার জন্য রাজনৈতিক সিনেমা সেন্সরড হয়। পেছনে রয়েছে ব্যাপক এক রাজনৈতিক অর্থনীতি সস্তা-অগভীর জিনিস নিয়ে অডিয়েন্সকে মাতিয়ে রেখে সমাজের অসমতা, অসামঞ্জস্যতা থেকে অডিয়েন্সের চোখ সরিয়ে রাখার প্রয়াস। যাতে সিস্টেম তার নিজস্ব গতিতে চলতে থাকে, আর সিস্টেমের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদের জন্ম না হয়। একে চলমান টপ-ডাউন মডেল দীর্ঘস্থায়ী করার এক প্রক্রিয়াই বলা চলে।