Thursday, April 27, 2017
On April 27, 2017 by Jakia No comments
প্রফেসর তেসম এইচ. গেবরেইল |
১) অন্ধ অনুকরন নির্ভর চলচ্চিত্র
২) স্মৃতিকাতরতা (ঐতিহ্য মনেপড়া) নির্ভর চলচ্চিত্র
৩) প্রতিবাদী চলচ্চিত্র
এই তিনটি ধাপ ব্যাখ্যা করতে গেলে আমরা দেখি তৃতীয় বিশ্বের যে শিল্প বিকাশ তা ঘটে এই তিনটি পর্যায়ে। যার প্রথমটিতে একজন পরিচালক শুধুমাত্র ব্যবসায়িক মুনাফা লাভকেই শিল্পের একমাত্র উদ্দেশ্য বলে মনে করেন। যাকে বলা যায়- অর্থাৎ শিল্প নির্মাণ করতে হবে বলে করা। এর গুনগতমান, শৈল্পিক গুনাবলী তখন মূখ্য থাকে না।
এই পর্যায়ে পরিচলকরা বিদেশী সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরন করে। শুধুমাত্র চটক-চাকচিক্য-বিনোদনমূলক বিষয়বস্তু-ই এই পর্যায়ে বেশি প্রাধান্য পায়। সিনেমা ও যে হতে পারে প্রতিবাদের ভাষা, সংকটের প্রতিচ্ছবি এই ব্যাপারটি একেবারেই আসেনা। সিনেমাকে শুধুমাত্র বিনোদন প্রদানকারী এক মাধ্যম হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। সস্তা নাচ-গান, কুরুচিপূর্ণ যৌনতাই যেখানে মূখ্য উপাদান । তৃতীয় বিশ্বের যে সকল দেশ চরম দারিদ্র্য , দৈন্য , দুর্নীতি , সামাজিক অবক্ষয়ের মধ্যে বসবাস করে ,সেই সমাজের তৈরি সিনেমাতেই নায়ক-নায়িকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে নাচ-গান করছে আর সকল দুর্নীতির প্রতিবাদে প্রতীয়মান হচ্ছে ‘‘হিরো’’ (তথাকথিত)। অতিমানবীয় শক্তি দ্বারা হিরো সকল অন্যায় -দুর্নীতি প্রতিহত করছে। এই সিনেমাগুলোতে বাস্তবতার কোন ছোঁয়া নেই। বাস্তবতা থেকে নজর সরিয়ে সম্পূর্ণ বিনোদন দিয়ে দর্শককে বুঁদ করে রাখা হয়।
২য় পর্যায়ে এসে পরিচালক শিল্পী উপলবিদ্ধ করেন যে অন্য সংস্কৃতিকে নিয়ে চর্চা না করে বা অন্য সংস্কৃতিকে দেশীয় সংস্কৃতিতে না এনে নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে চিন্তা করা উচিত। দেশীয় সিনেমায় দেশীয় সংস্কৃতির উপস্থাপন প্রয়োজন। ইতিহাস - ঐতিহ্য নির্ভর সিনেমা এই পর্যায়ে গুরুত্ব পায়। যদিও এই পর্যায়ে পরিচালক প্রতিবাদী হয়ে উঠেন না, সমাজে বিদ্যমান অসমতা এপর্যায়ে সেভাবে উঠে আসেনা। একেবারে অন্ধ অনুকরন না করে এ পর্যায়ে চলচ্চিত্রকারের কিছুটা সৃজনশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়।
তৃতীয় পর্যায়ে এসে আমরা যে সিনেমাগুলো দেখতে পাই সেখানে সমাজে বিদ্যমান কাঠামোকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করা হয়, শোষণ-নিপীড়ন এর বিরুদ্ধে সরাসরি বক্তব্য উঠে আসে। চলচ্চিত্রকে ব্যবহার করা হয় প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে, চেতনাকে জাগ্রত করার মাধ্যম হিসেবে। এই ধরনের সিনেমা নির্মানের ধরন, দৃশ্যায়ন , সংলাপ, বক্তব্যের গভীরতা থাকে গতানুগতিকতার বাইরে। শুধুমাত্র বিনোদন নির্ভর না হয়ে এধরনের সিনেমা হয় বাস্তবধর্মী । এই ধরনের সিনেমায় সেল্ফ রিফ্লেক্সিবিটি থাকে, দর্শকের মনে প্রশ্নের উদ্রেক হয় একি সিনেমা নাকি বাস্তব? এ ধরনের সিনেমা দর্শককে সম্পূর্ণরূপে নিষ্ক্রিয় হয়ে, বুঁদ হয়ে সিনেমা দেখতে দেয়না। বরং দর্শককে সরাসরি সিনেমার কন্টেন্ট এর সাথে যুক্ত করে।
এই তিনটি পর্যায়কে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে আমাদের দেশের অন্যতম এক উদাহরণ হতে পারে- জহির রায়হান। যিনি তাঁর শিল্পচর্চা শুরু করেছেন উর্দু সিনেমা তৈরির মাধ্যমে । পরবর্তীতে তাঁর মধ্যে চেতনা জাগ্রত হয় নিজসংস্কৃতি নিয়ে কাজ করার। তিনি নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে সিনেমা তৈরি করেন। নির্মাণ করেন “বেহুলা”।
জহির রায়হান পরিচালিত “বেহুলা” সিনেমায়- বেহুলা ও লখিন্দেরর ভূমিকায় সুচন্দা ও নবাগত রাজ্জাক |
জহির রায়হান পরিচালিত- “জীবন থেকে নেয়া” |
তৃতীয় ধারার এই চলচ্চিত্র নির্মাণের পর জহির রায়হান একটি কথা বলেন যে- তিনি যে পর্যায়ে এখন চলে এসেছেন, সেখানে থেকে পেছনে ফিরে তাকানোর আর সুযোগ নেই। এটা তাঁর একটা প্রতিবাদ। একজন সাহিত্যিক কলমের মাধ্যমে প্রতিবাদ ব্যাখ্যা করেন, একই জায়গায় সিনেমা নির্মাতা ক্যামেরার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাতে পারে। ক্যামেরাই হয়ে উঠে পরিচালকের কলম। জহির রায়হান সেই আন্দোলনটিই শুরু করেছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার - সংগ্রামটি তিনি বেশিদিন চালিয়ে যেতে পারেননি !
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment